দুটি বাক্যের মধ্যেই থাকে প্রেম! আমি তোমাকে ভালোবাসি এবং তোমাকে চাই। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্যই তো এত এত কাহিনি-গল্প। যদিও শেষ পর্যন্ত কেউ পায়, কেউ পায় না। মানে প্রেমে কেউ সফল হয়, কেউ ব্যর্থ। কিন্তু চাওয়াটা তো তোমাকেই। ভালোবাসার এই বাক্য নিয়েই নির্মাণ হয়েছে অনেক ছবি। তার মধ্যে একটির নামই ‘তোমাকে চাই’। ১৯৯৬ সালের ২১ জুন ছবিটি ঢাকাসহ সারাদেশে মুক্তি পায়। ছবিটি পরিচালনা করেন অনেক ছবির গুণী নির্মাতা মতিন রহমান। এই ছবিতে অভিনয় করেছেন অকাল প্রয়াত নায়ক সালমান শাহ। তার বিপরীতে ছিলেন শাবনূর। তারা একসঙ্গে যতগুলো ছবিতে কাজ করেছেন তার মধ্যে অন্যতম ‘তোমাকে চাই’।
‘তোমাকে চাই, শুধু তোমাকে চাই/ আর কিছু জীবনে পাই বা না পাই’- এই কথাগুলো মুখস্থ নেই এমন মানুষ পাওয়া যাবে না। গুনগুনিয়ে এখনো অনেকেই এই গান গেয়ে থাকেন। গানটি ব্যবহার করা হয়েছিল ‘তোমাকে চাই’ ছবিতে। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন সদ্য প্রয়াত এন্ড্রু কিশোর। তার সঙ্গে ছিলেন কনকচাঁপা। সালমান শাহর সফল ও বৈচিত্র্যপূর্ণ ছোট ক্যারিয়ারের অন্যতম সুপারহিট ছবি ‘তোমাকে চাই’। ছবিটির সবগুলো গানই সুপারহিট। মো. নুরুল ইসলাম পারভেজ প্রযোজিত এই ছবিটির আর একটি গানের আবেদন পৃথিবী যতদিন থাকেব ততদিনই রয়ে যাবে। আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল, এন্ড্রু কিশোর ও সালমান শাহ এই ত্রয়ীর তুমুল হিট গান ‘ভালো আছি ভালো থেকো।’ দেশের নন্দিত কবি রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহর লেখা ও সুরের এই গানটিকে নতুন করে ‘তোমাকে চাই’ ছবির জন্য সংগীতায়োজন করেছিলেন আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুল। গানটি প্রসঙ্গে পুরনো স্মৃতি রোমন্থন করে নির্মাতা মতিন রহমান জানিয়েছিলেন, “শুরুর দিকে এই গানটি কোনোভাবেই গাইতে রাজি ছিলেন না এন্ড্রু কিশোর। কেননা গানটি অনেক আগেই একটি নাটকে ব্যবহার করা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘অন্যের গাওয়া গান আমি গাইতে পারব না।’ যদিও পরে আমাদের অনুরোধে গানটি গেয়েছিলেন তিনি। দারুণ গেয়েছিলেন এবং সেটি শ্রোতাপ্রিয় হয়েছিল। যা দেখে রীতিমতো অবাক হয়েছিলেন এন্ড্রু কিশোর।”
ছবিটিতে অভিনয় প্রসঙ্গে শাবনূর বলেন, ‘এটা আমার ক্যারিয়ারে অন্যতম প্রেমের ছবি। এতে আমি অভিনয় করেছি নদী নামে। আর সালমান শাহের নাম ছিল সাগর। ছবিতে অভিনয় করার সময় আমি অনেক ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। এই ছবির প্রতিটি গানই আমার প্রিয়। বিশেষ করে, তুমি আমায় করতে সুখী জীবনে গানটি আমি মাঝে মাঝেই গাই। আরও একটি গান আমার ভালো লাগে- বাজারে যাচাই করে। এ ছাড়া বাকি গানগুলো সবার মুখেই শুনি।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেককেই আমি বলতে শুনেছি ভালো আছি ভালো থেকো গানটি ছবিটিকে দিয়েছে সেরা রোমান্টিক ছবির মর্যাদা। এই গানও প্রেমের সেরা গান হিসেবে সমাদৃত। এই ছবিতে প্রেমিক-প্রেমিকা চরিত্রে আমার আর সালমানের অভিনয় নাকি ছিল অনবদ্য। আমার কাছেও মনে হয়েছিলÑ আর দশটা প্রেমের ছবির চেয়ে এর গল্পটা পরিণত। আমি আর সালমান পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেছিলাম। এই ছবির পর সালমান-শাবনূর জুটি পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেল।’ এই ছবিতে শাবনূরের চিঠি পাওয়ার পর আবেগে সালমানের চোখের জল মোছার দৃশ্য আজও প্রেমিক হৃদয়ে ঝড় তোলে। বাংলা ছবির প্রেমের ইতিহাস ঘাঁটলে অনেক ছবির দেখাই মিলবে। তবে ‘তোমাকে চাই’ ছবিটি শুধু প্রেম নয়, আবেগে ঠাসা একটি ছবি। তরুণ-তরুণী হৃদয় জয় করেছিল ছবিটি। বিশেষ করে, সালমান শাহ দর্শকের হৃদয়ে প্রেমিক পুরুষ হিসেবে স্থান পায় এই ছবির কারণে। আর সালমান-শাবনূর জুটির তোলপাড় করা এটি ঢাকাই চলচ্চিত্রে ভিন্নরকম আবহ তৈরি করতে পেরেছিল। এখনো এ ছবিটি সমান আবেদন ধরে রাখতে পেরেছে। ছবিটিতে আরও অভিনয় করেছিলেন খলিল, আরিফুল হক, ডন, শর্মিলী আহমেদ, সাইফুদ্দিন, অমল বোস, সুজা খন্দকার, নাসরিন প্রমুখ।
Leave a Reply